চন্দ্র পাহাড়ে হোটেল নির্মাণঃ ম্রো উপজাতির হাসি-কান্না

0
62

 

সম্প্রতি সময়ে বান্দরবানে চন্দ্র পাহাড় নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় লং মার্চ হচ্ছে, মিছিল হচ্ছে, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ হচ্ছে আসলেই কি এগুলো ম্রো সম্প্রদায়ের দাবী, নাকি এগুলো কোন স্বার্থান্বেষী মহল করছে তা খতিয়ে দেখার সময় এসেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের একজন সাধারণ সচেতন নাগরিক হিসাবে স্বার্থান্বেষী মহলের এই চক্রান্তকে বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন বোধ করছি আমার মনে বারবার একটি কথাই শুধু নাড়া দিয়ে যাচ্ছে তা হলোসত্যকে উন্মোচিত করা, অপপ্রচারকে প্রতিহত করা এরই পরিপ্রেক্ষিতে, নিম্নে বর্ণিত তথ্যসমূহ মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য উন্মুক্ত আহ্বান জানাচ্ছি এবং সেই সাথে আহ্বান জানাচ্ছি স্বশরীরে চন্দ্র পাহাড়ে এসে তা অবলোকন করার

যে এলাকাটি নিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিক্ষোভ, সমাবেশ, মিছিল, লং মার্চ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত ছাত্র/ছাত্রীদের এমন কর্মসূচী আয়োজন করা হচ্ছে তা কি আসলেই ম্রো সম্প্রদায়ের পক্ষে? উত্তরটা যাচাই করে দেখা যাক আমি সরেজমিনে জায়গাটি ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি আমি নিজে ম্রো সম্প্রদায়ের একজন ব্যক্তি হিসাবে আমার সম্প্রদায়ের উন্নয়ন আমার থেকে অন্য কেউ সুস্পষ্ট করে বলতে পারবে না এটাই স্বাভাবিক বাস্তবতা হলো চন্দ্র পাহাড়ের পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণের জন্য নির্বাচিত স্থানটিতে কখনোই কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বসতভিটা ছিলনা বিশ্বাস হচ্ছে না? আচ্ছা পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থিত ১৫ টি পর্বতমালা বা Range এর অন্যতম চিম্বুক পাহাড়ের চন্দ্র পাহাড় একটি তৃতীয় শ্রেণীভুক্ত জঙ্গলাকীর্ণ একটি এলাকা, যা সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত অর্থাৎ কোন ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমি নয় চিম্বুক পাহাড় আনুমানিক ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ যা বান্দরবান সদরের তেতুলপাড়া নামক স্থান হতে শুরু হয়ে সীমান্ত পিলার ৬৪ অতিক্রম করে মায়ানমারে প্রবেশ করেছে এই সুদীর্ঘ ১০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাহাড়ের মধ্যে মাত্র ২০ একর জমি পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত প্রথা রীতি মেনে সেখানকার জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি অর্থাৎ হেডম্যানের অনুমতি সাপেক্ষে বান্দরবান জেলা পরিষদের অনুমোদনে সরকারের নিকট থেকে ৪০ বছরের জন্য লিজ নেওয়া হয়েছে ব্যাপারে বান্দরবান জেলা পরিষদ তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট করে সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি প্রদান করে তাই বস্তুত চন্দ্র পাহাড়ে যেহেতু কোন জনবসতিই নেই সেখানে ম্রো সম্প্রদায়ের মানুষকে ভিটেমাটি উচ্ছেদের বিষয়টি সম্পূর্ণ বানোয়াট, মিথ্যা উদ্দেশ্যে প্রণোদিত বলেই প্রতীয়মান হয় তারপরও পাঠককে সরেজমিনে এসে তা যাচাই করার জমা আহ্বান জানাচ্ছি

সকল সচেতন নাগরিকদের নিকট আমার প্রশ্ন রইল পৃথিবীর সর্বোচ্চ দীর্ঘ পর্বতমালার মালিক কে? আপনার উত্তর যদি হয় সেখানে বসবাসকারী তামাং, লিম্বু, গুরখা বা সেরপা জাতিগোষ্ঠীর মানুষ তবে আপনি আপনাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করলেন কারণ হিমালয়ের স্বত্ত্বাধীকার কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নয় বরং সে দেশের সরকার তাহলে ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই চিম্বুক পাহাড়ের মালিকানা কিভাবে এলাকার আশেপাশে বসবাসরত একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর হয়?

এবার চলুন হিমালয়ের বিষয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক শুধু হিমালয় দেখার টানে ছুটে যায় নেপালে তারই পরিপ্রেক্ষিতে, সেখানে গড়ে উঠেছে শত শত হোটেল কাঠমান্ডু, পোখাড়া এবং অন্যপূর্ণা এলাকায় গিয়ে সুস্পষ্টই তাদের পর্যটন শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয় যার উপরে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে নেপালের অর্থনীতি সকল প্রত্যন্ত এলাকার মানুষদের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হলো পর্যটন শিল্প তারা যদি হোটেল বা রিসোর্ট নির্মাণে বাঁধা দিত তবে নেপালের অর্থনীতি আজ মুখ থুবড়ে পড়ে যেত হিমালয়কে যদি কেউ ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি বিবেচনা না করে তবে চিম্বুক পর্বতমালা কিভাবে একটি জাতিগোষ্ঠীর কিছু সংখ্যক মানুষের ব্যক্তি মালিকানাধীন হয়? আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে বোধগম্য নয় তবে পাঠকের প্রসার জ্ঞানের কাছে প্রশ্ন থাকল বিক্ষোভকারীদের অগাধ জ্ঞান ভান্ডারে যদি কিঞ্চিৎ উত্তর থেকে থাকে তবে তা বাস্তবভাবে জানার চেষ্টা করুন

পাহাড়ের বাসিন্দা হিসাবে আপনাদের জানাচ্ছি যে, এই চিম্বুক পাহাড়েই কিন্তু সাইরু নামে পাঁচ তারকা বিশিষ্ট ব্যক্তিমালিকানাধীন রিসোর্ট রয়েছে যা এই এলাকার উপজাতিদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে আশ্চর্যের বিষয় হলো, চন্দ্র পাহাড়ে হোটেল নির্মাণ ২০১৫ সালে শুরু হলেও তার কোন বিরোধিতা কেউ করেনি কিন্তু সরকার যখনই পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে দেশিবিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে, বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে ঠিক তখনই কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় এবং অবৈধ অস্ত্রের মুখে জিম্মি হয়ে মুষ্টিমেয় কয়েকজন ব্যক্তির অংশগ্রহনে মিছিল, সমাবেশ লং মার্চের আয়োজন করা হচ্ছে

এই হোটেল নির্মাণের বিরোধিতা কে করছে? কেন করছে তারা এখানে কাদের স্বার্থ? কিসের স্বার্থ? এখন সময় হয়েছে তা উন্মোচন করার বান্দরবান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঁধার এই হোটেল নির্মাণের সাথে ম্রো জাতির ভাগ্য পরিবর্তন অনিবার্য র্থনৈতিক মুক্তি অবশ্যম্ভাবী তাই যারা পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার চুক্তি করে গোপনে জিইয়ে রেখেছে অস্ত্র, প্রত্যেকটি সম্প্রদায়ের নিরীহ মানুষকে করে রেখেছে জিম্মি তারা কখনোই চায়না পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মুক্তি পাক উপজাতিদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, বাক স্বাধীনতা তাদেরকে নামিয়ে দিবে রাজসিংহাসন থেকে সন্ত্রাসীদের কারনেই সুবিধা বঞ্চিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আজও মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারে না তাই সন্ত্রাসী পালনের মধ্য দিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আর কতদিন স্বজাতি অন্যান্য উপজাতিদের উপর রাজত্ব করে যাবেন? এবার মুক্তি চাই অর্থনৈতিক মুক্তি সামাজিক মুক্তি অস্ত্রের মুখে জিম্মি থেকে মুক্তি

দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে স্বজাতির এই নিষ্ঠুর আচরনে একমাত্র চন্দ্র পাহাড়ে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণই পারে ম্রো সম্প্রদায়ের ভাগ্য পরিবর্তন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিকভাবে আরও প্রতিষ্ঠিত করতে খাগড়াছড়ির সাজেক, রাঙ্গামাটির সুদর্শন পর্যটন কেন্দ্র সমূহ, বান্দরবানের নীলগিরি যেভাবে পিছিয়ে পড়া উপজাতিদের ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে, বান্দরবানের ম্রো সম্প্রদায়ের হৃদয়ের আকাঙ্খা এবং বলিষ্ঠ দাবী যে এখানে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ হবে এর জন্য ম্রো উপজাতি সমাবেশ করেছে এবং হোটেল নির্মাণের পক্ষে তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট করেছে তাই হোটেল নির্মাণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারী, লং মার্চে অংশগ্রহণকারী, সমাবেশ, র‍্যালী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশের আয়োজনকারীদের মিথ্যা, বানোয়াট উদ্দেশ্য প্রণোদিত না হয়ে আপামর ম্রো সম্প্রদায় সাধারণ উপজাতি পার্বত্য চট্টগ্রামে তথা বান্দরবানে বসবাসকারী সকলের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে বলুনউপজাতিদের ভাগ্য পরিবর্তনে চন্দ্র পাহাড়ে হোটেল নির্মাণের দ্রুত বাস্তবায়ন চাই

মেনলং ম্রো

বান্দরবান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here