জাতিসংঘে বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার কে এই অগাস্টিনা চাকমা?

0
26

বাংলাদেশের এক ও অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলাকে নিয়ে ৫০৯৩ বর্গমাইল ভূমির মালিক বাংলাদেশের আমজনতা। দেশের এক দশমাংশ মাটি কেড়ে নিয়ে সেখানে স্বাধীনতার পতাকা উড়ানোর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে দেশি বিদেশি বিভিন্ন মহল। পাহাড়ে শতশত সেনা হত্যা, ৪০ হাজার বাঙালি হত্যা, জুম্মল্যান্ড যড়যন্ত্রের হোতা ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি ভঙ্গকারী জেএসএস চেয়ারম্যান বাবু সন্তু লারমার নেতৃত্বে এই ষড়যন্ত্র জাতিসংঘ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। সন্তুবাবু সরকারী বেতন ভাতা খেয়ে যাবতীয় সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পরও দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান পদটি দখল করে আছেন এবং বরাবরই শান্তিচুক্তির শতভাগ বাস্তবায়নের অজুহাত তুলে পাহাড়ে নির্বিচারে চাঁদাবাজি, খুন, মুক্তপন আদায় সহ যাবতীয় রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ সন্তু লারমার প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে এবং বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফ নামধারী দেশদ্রোহী উপজাতি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি কম্বিং অপারেশন চালু করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছে।

 ঠিক এই সময় গত ৩০ এপ্রিল ২০২২ইং জাতিসংঘে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে অগাস্টিনা চাকমা নামে এক কুখ্যাত অখ্যাত অষ্টাদশী নারী পার্বত্য চট্টগ্রাম বীর সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে তথাকথিত শান্তিচুক্তির বিভিন্ন ধারা লংঘনের অভিযোগ তুলেছেন। অগাস্টিনা একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করে নিজেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। দেশি বিদেশি বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে তার এই মিথ্যা প্রচারনা ব্যাপকভাবে সাড়া যুগিয়েছে। অথচ কে এই অগাস্টিনা চাকমা তা পার্বত্য চট্টগ্রামের কোন নাগরিকই বলতে পারছে না। ২রা ডিসেম্বর ১৯৯৭ইং শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও সন্তু লারমার মাধ্যমে। ইতিমধ্যেই চুক্তির ৯৮ ভাগ শর্ত পালন করে সরকার সন্তু লারমার হাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এবং তিন পার্বত্য জেলার উপজাতি নেতাদের কাছে পার্বত্য জেলা পরিষদ বুঝিয়ে দিয়েছেন। ১২ বছরের উপরে চলে যাবার পরও তিন পার্বত্য জেলায় স্বায়ত্বশাসন এর নামে সেখানে কোন নির্বাচন দেয়া হচ্ছে না। দেশের ৬১টি জেলায় জেলা পরিষদ যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে পাহাড়ের তিনটি জেলায় সেভাবে না হয়ে মিনি স্বাধীনতা প্রদান করে সেখানকার স্থানীয় সরকার প্রায় ৭২টি সরকারি বিভাগ ও দপ্তর পরিচালনা করছে। তারপরও প্রতিদিনই তিন জেলায় এক বা একাধিক খুন খারাবি অব্যাহত রয়েছে। শুধুমাত্র জেলা সদর ছাড়া প্রত্যন্ত দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় বাংলাদেশ সরকারের কোন নিয়ন্ত্রন আছে বলে মনে হয় না। সেখানে জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফ ক্যাডারদের অনুমতি ছাড়া গাছের পাতাও নরে না। খুন ডাকাতি মুক্তিপন চাঁদাবাজি হত্যা ইত্যাদি পাহাড়ের জঙ্গলে জঙ্গলে অব্যাহ রয়েছে। শান্তি চুক্তির প্রধান শর্ত ছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির অস্ত্রধারী ক্যাডারদের (খুনী শাস্তি বাহিনী) আত্মসমর্পন করা এবং যাবতীয় বে-আইনী অস্ত্র, শস্ত্র ও গোলাবারুদ সরকারের কাছে সমর্পন করা। কিন্তু এই প্রধান শর্তটি ছাড়া সন্তু লারমা অন্যান্য সব সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছেন এবং বাংলাদেশ সরকারের একজন বেতনভোগী প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিনি ও তার তিন চার হাজার অনুসারীকে ভোগ করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু বিনিময়ে পাহাড়ের জনগণ আজ পর্যন্ত শান্তি ও নিরাপত্তার নূন্যতম সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর কি কোন প্রতিকার নেই।

সন্তু লারমা বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার অব্যাহত রেখেছেন। তার সর্বশেষ নমুনা হিসেবে তারই পরিবারের সদস্য অগাস্টিনা চাকমাকে জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারে অংশগ্রহণ করার জন্য পাঠিয়েছে। মূলত অগাস্টিনা একজন মডেল, দেহ সর্বস্র এবং উশৃঙ্খল পোষাকে অভ্যস্থ কানাডিয়ান নাগরিক। তার বিলাশবহুল জীবনের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। তার পোশাক আসাকে এবং সুইমিং পুলে ব্যায়ামরত পোশাকে পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী সমাজ লজ্জিত হচ্ছেন। এই কি জুম্ম নারীর নমুনা? যেখানে পাহাড়ের বসবাসরত চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, বম, পাংখু, লুচাই ও বাঙালি নারী সমাজ সহজ সাধারণ জীবনে অভ্যস্ত, সেখানে এই অর্ধনগ্ন অষ্টাদশী অগাস্টিনা চাকমাকে দারুনভাবে বেমানান ও অবহেলিত নির্যাতিত নিপিড়ীত পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী সমাজের সাথে উপহাস ছাড়া আর কিছুই তুলনা করা যায় না।

 পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের প্রশ্ন- অগাস্টিনা চাকমা কি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংহতি সমিতির কোন সদস্য? তার চাইতে অনেক সিনিয়র নেতা পিসিজেএসএস করে আসছেন। তাদেরকে কেন জাতিসংঘে বক্তিতা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হল না। ইতিপূর্বে কোন সভা সমিতিতে জনসংহতি সমিতি, হিল ওমেন ফেডারেশন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ইত্যাদিতে অগাস্টিনাকে জনগণ দেখে নাই। কোটি কোটি টাকা খরচ করে এই অখ্যাত কুখ্যাত মডেলকে নিউইয়র্ক পাঠানোর রহস্য কি? এছাড়া সে যদি কানাডার নাগরিক হয়ে থাকে তবে সে কানাডা সরকারের নাগরিকত্ব আইন লঙ্গন করেছে। কেননা কানাডার কোন নাগরিক বাংলাদেশের আভ্যন্তরিন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে না। জাতি সংঘের মত একটি আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে বাংলাদেশের সরকার, পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি জনগোষ্টী এবং বাংলাদেশের বীর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কানাডার কোন নাগরিক অভিযোগ করার অধিকার রাখে না। বাংলাদেশের অভ্যন্তরিন বিষয়ে নাকগলানো এই মহিলা কানাডার নাগরিক হয়ে যে গুরুত্বর অপরাধ করেছেন তার বিরুদ্ধে কানাডার সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে বাংলাদেশের জনগণ মনে করছে।

 একই সাথে সন্তু লারমা বাংলাদেশ সরকারের সুবিধাভোগকারী বেতনভোগী একজন কর্মচারী হয়ে তিনি কিভাবে এ ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী আচরণ অব্যাহত রেখেছেন তারও একটি সুরাহা করা দরকার। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স মাঠে জেনারেল নিয়াজি বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় মিত্র বাহিনীর কাছে আত্ম সমর্পন করেছিলেন। এরপর নিয়াজি কোন প্রচার মাধ্যমে কথা বলার সুযোগ পান নাই। জেএসএস নেতা সন্তু লারমা ২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ ইং খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে একটি ভারতীয় স্টেনগান সহ প্রকাশ্যে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আত্মসমর্পন করেছেন। বিশ্বের কোথাও আত্মসমর্পন কারী শত্রুতা কোন গোষ্ঠিকে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে এত বেশী সুযোগ দেয়া হয় নাই। বাংলাদেশের ইতিহাসে সন্তু লারমারা একটি বিরল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন। সন্তু লারমা যাবতীয় সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেও এই হতদরিদ্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অহরহ মিথ্যা প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোথায় ও আদিবাসী দিবস কিংবা অন্য কোন অযুহাতে সন্তু লারমা হৈ চৈ শুরু করে পূর্ণ বাস্তবায়ন ছাড়া শান্তিচুক্তি মানা হবে না বলে চিৎকার শুরু করে দেন। অথচ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারী মাতৃভাষা দিবস সহ জাতীয় কোন কর্মসূচীতে তাকে দেখা যায় না। এমনকি তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ এনআইডি ছাড়াই বুক ভূলিয়ে বিচরন করে যাচ্ছেন। শান্তিচুক্তির কোথাও কি এভাবে বন্দুকযুদ্ধ, চাঁদাবাজি, অস্ত্রের মহরা প্রদর্শন মুক্তিপন, ভিন্ন মতাবলম্বীদের হত্যা, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি বা অন্য কোন রাজনীতি করা অন্যায় বলে পাহাড়ী সদস্যদেরকে হত্যা করা ইত্যাদির শর্ত আছে। সন্তু লারমা নিজেই একদল উপজাতি যুবক এবং সেনা পুলিশ পাহাড়ায় চলাফেরা করছেন। এমতাবস্থায় বে-আইনী অস্ত্র উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত শান্তিচুক্তির শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা তা জাতিকে পুনরায় ভেবে দেখতে হবে। আশা করি অগাস্টিনা চাকমাদের মত মডেল পাঠিয়ে জাতিসংঘকে আর বিব্রত করবেন না। নির্বাচনে আসুন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদে নির্বাচনী প্রতিনিধি পাঠাতে চায়। গণতন্ত্রের চর্চা করুন। জাতি আপনার কাছে ঐক্য, শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নতির আশা করে।

খবর সবার আগে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন*

https://t.me/savecht

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here