পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের আদিবাসী দাবি করার কারণ কি?

0
38

৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। জাতিসংঘ ১৯৯৩ সাল থেকে আদিবাসী দিবস পালন আরম্ভ করে। এরপর থেকে প্রতি বছর ৯ আগস্ট আদিবাসী দিবস হিসাবে পালিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সরকারীভাবে আদিবাসী দিবস পালন করা হয় না। কারণ বাংলাদেশে প্রকৃত প্রস্তাবে কোন আদিবাসী নেই। এরপরও পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা জাতিসংঘ থেকে বিশেষ সুবিধা নেওয়ার জন্য নিজেদেরকে আদিবাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। উপজাতিরা ভাল করেই জানে তারা আদিবাসী নয় তারা উপজাতি, পার্বত্য চুক্তিতেও তারা নিজেদেরকে উপজাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে, কিন্তু আজ তারা দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে নতুন করে নিজেদেরকে আদিবাসী হিসেবে পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা বাঙ্গালী আমাদের জন্মলগ্ন থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের পরিচয় একটি, আমরা বাঙ্গালী। সুবিধা আদায়ের জন্য আমরা আমাদের এই পরিচয়কে যেমন যখন তখন পরিবর্তন করার চেষ্টা করাটা নিন্দনীয়,  অসাংবিধানিক ও অপরাধযোগ্য, ঠিক উপজাতিদের আদিবাসী করার চেষ্টাও  নিন্দনীয়, অসাংবিধানিক ও অপরাধযোগ্য, পার্বত্য চুক্তির ধারা ভঙ্গকারী হিসেবে তা রাষ্ট্রদ্রোহীতার শামিল।

এখন উপজাতি ও আদিবাসী শব্দের মধ্যকার বিতর্কের কারণ জানতে হলে আগে উপজাতি ও আদিবাসী সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দরকার। উপজাতি শব্দটির আভিধানিক অর্থ কিছু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমষ্টি। আদিবাসী বলতে বোঝায় কোন একটা দেশে আদিকাল থেকে বসবাসকারী জনসমষ্টিকে। কিন্তু উপজাতিয় নেতৃবৃন্দ, কিছু বামপন্থী বুদ্ধিজীবী, উপজাতিদের কিছু দালাল, বিদেশী মদতপুষ্ট কিছু বাঙ্গালী রূপী শয়তানসহ অনেক উপজাতি দাবি করছে তিন পার্বত্য জেলার উপজাতিরা হচ্ছে আদিবাসী। কিভাবে তারা নিজেদেরকে আদিবাসী দাবি করছে? সে প্রশ্ন পার্বত্যবাসীর, সুশীল সমাজের, দেশপ্রেমিকদের, ছাত্র সমাজের, সকল স্তরের জনগনসহ সরকারের। কারণ উপজাতিরা এই এলাকায় পার্শ্ববর্তী দেশ বার্মা, চীন, ভারতের মিজোরাম, ত্রিপুরা থেকে সেই দেশের সরকার কর্তৃক তাড়িত হয়ে আমাদের বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে ঠাই নিয়েছে। উড়ে এসে জুড়ে বসে তারা দাবি করছে আমরা এই এলাকার আদিবাসী আর বাকীরা সবাই বহিরাগত, অথচ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় পার্বত্য এলাকার আসল আদিবাসী বাঙ্গালীরা। অন্যদিকে তিন পার্বত্য জেলার ইতিহাস ও সমগ্র বিশ্বের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে তিন জেলার ১৩টি উপজাতি চাকমা, মগ, মুরং, কুকি, খুমি, বনজোগী, পাংখো, লুসাই, তংচঙ্গা, বোমাং, রাখাইন, খিয়াং, ত্রিপুরা মূলত ১৬০০-১৯০০ সালের মধ্যে বিভিন্ন জায়গা/দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে অত্র অঞ্চলে বসবাস শুরু করে।

চাকমা জাতি এক সময় ব্রম্ম দেশে ছিল। ব্রম্ম দেশটি বর্তমানে মায়ানমার নামে পরিচিত। এছাড়া ১৭৮৭ সালের ২৪ জুন ব্রম্ম রাজ কর্তৃক চট্টগ্রামের শাসনকর্তাকে লিখিত এক চিঠি থেকে একটি সঠিক ইতিহাস বের হয়ে আসে। তা হল – চাকমারা ব্রম্ম দেশে শান্তি ভঙ্গ করে, রাজশক্তি অবমাননা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পালিয়ে আসে এবং সেখানে বসবাস শুরু করে এবং তারা ডাকাতি বৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। আর এই জন্য ব্রম্ম রাজা তৎকালীন চট্টগ্রামের শাসনকর্তাকে লিখিত চিঠির মাধ্যমে তার দেশের বিতাড়িত ব্যক্তিদের ফেরত পাঠানোর আবেদন করেন। এই ঐতিহাসিক চিঠির মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে, চাকমারা এই অঞ্চলে আদিবাসী নয় বহিরাগত। তাছাড়া ইতিহাস থেকে আরো জানা যায় যে, চাকমারা মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভুত যারা মূলত: দক্ষিণ চীনের ইউনান প্রদেশের আদি অধিবাসী। তাদের উগ্রবাদী আচারণ, স্বেচ্চাচারীতায় অতিষ্ঠ হয়ে তৎকালীন চীন সরকার তাদেরকে সেখান থেকে বিতাড়িত করে দেয়। সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে চাকমারা থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছিল, কিন্তু থাইল্যান্ডের রাজাও তাদেরকে বিতাড়িত করলে তারা মায়ানমারে আশ্রয় নেয়। ১৭৮৪ সালে বার্মা যুদ্ধে মগদের দ্বারা বিতাড়িত হয়ে ইংরেজদের পরোক্ষ সহযোগিতা নিয়ে চাকমারা পার্বত্য চট্টগামে বসবাস শুরু করে। কুকি গোত্রের উপজাতিরা যেমন: বোমা, লুসাই, পাংখো, মুরং, খুমিরা মায়ানমার, চীনের বিভিন্ন প্রদেশ ও উত্তর ভারত হতে পার্বত্য চট্টগ্রামে এসে বসতি স্থাপন করে। এরপরে বসতি স্থাপন করে ত্রিপুরা গোষ্ঠীর বিভিন্ন উপজাতি যেমন: রাখাইন, খিয়াং. ত্রিপুরা, তংচঙ্গারা।

এরপরও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (শন্তু লারমা) গড়েছেন আদিবাসী ফোরাম। যার লক্ষ হচ্ছে তথাকথিত আদিবাসীদের নিয়ে একটি পৃথক রাষ্ট্র গড়া। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি কোন একটা বিশেষ ভৌগলিক এলাকায় বাস করে না। কথা বলে না কোন একটি মাত্রি ভাষায়। তাদের ইতিহাস ধর্ম বিশ্বাস অর্থনৈতিক জীবন এক নয়। সর্বপরি তারা সকলে এক মানবধারাভুক্তও নয়। খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলায় মারমা এবং চাকমাদের মধ্যে লেগে আছে বিবাদ বিসংবাদ। শন্তু লারমার এক রাষ্ট্রের ধারণা বাস্তবায়ন ভাই সহজ সাধ্য নয়। অন্যদিকে বাংলাদেশে বাংলাভাষী মানুষ হল এদেশের ভূমিজ সন্তান। তারা যুগযুগ ধরে বাস করছে এখানে। আজকের পৃথক রাষ্ট্র বাংলাদেশ হল তাদের সংগ্রামের ফল। এদেশ রক্ষা করবার জন্যে যুদ্ধ করতে হলে অবশ্যই তারা তা করবে। সে মনোবল তাদের আছে। তারা শন্তু লারমার মত কারও হুংকারের ভয়ে ভীত হবার নয়। পর্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতিদের মধ্যে বক্তৃতা দিতে গিয়ে শেখ মুজিব তাদের বলেছিলেন বাঙালি হতে। কিন্তু বর্তমানে বলা হচ্ছে যে, সাবেক পর্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপজাতিরা স্বাধীন হবার যোগ্য। পর্বত্য চট্টগ্রাম বিচ্ছিন্ন হবার অর্থ দাঁড়াবে বাংলাদেশের ১০ ভাগের একভাগ ভূমি চলে যাওয়া। বিরাট প্রাকৃতিক সম্পদ হারানো এবং সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়া। বাংলাদেশের মানুষ সেটা হতে দিতে পারে না। নানা ষড়যন্ত্র চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অনেক উপজাতি খৃস্টান হয়েছে। কিছু বিদেশী খৃস্টান মিশনারী নাকি চাচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলকে পূর্ব তিমুরের মত একটি খৃস্টান রাষ্ট্রে পরিণত করতে। শন্তু লারমা কাদের এজেন্ট আমরা জানি না। আমরা জানি না বাংলাদেশে এশিয়াটিক সোসাইটি কাদের অর্থে চলেছে। বাংলাদেশের বাংলা একাডেমী এমন অনেক কিছু করছে যা হচ্ছে না বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূল। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের একাংশের কার্যকলাপ যেন হয়ে উঠতে চাচ্ছে খুবই স্বদেশ বিরোধী।

উপরের আলোচনা এটি সুস্পষ্ট ভাবে প্রতিয়মান হয় যে, বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই অর্থাৎ পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতিদের বসবাস, আদিবাসীদের নয়, শুধুমাত্র জাতিসংঘ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা রাষ্ট্র বানানোর জন্য তারা নিজেদেরকে আদিবাসী দাবি করছে। সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে যে সব ব্যক্তি, পত্র পত্রিকা, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া উপজাতিদের আদিবাসী করার অপপ্রচেষ্ঠা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা করে তাদের অচিরেই বিচার করা দরকার।

পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল খবর সবার আগে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন*

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here