পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইউপিডিএফ-জেএসএস কে দেখা যায়নি সাধারণ মানুষের কাতারে!

0
41

গত ১০দিনে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১০০০ মিলিমিটারের বেশি। ভারী বর্ষণে পাহাড়ি ঢলের পানিতে বান্দরবান জেলার প্রধান ২ নদী সাঙ্গু ও মাতামুহুরী বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। এতে জেলা শহরসহ রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, লামা ও আলীকদম উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বন্যায় ১৫ হাজার ৮০০ পরিবার আক্রান্ত হয়েছে এবং ১৫ হাজার ৬০০টি বাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃষি বিভাগের উদ্ধৃতি দিয়ে জেলা প্রশাসক বলেছেন, কৃষি খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ৮ হাজার ২৫৩ হেক্টর ফসলি জমি বন্যায় তলিয়ে গেছে। বন্যা ও ভূমিধসের ফলে ১০ জনের মৃত্যুর কথাও জানান তিনি। এছাড়া অবিরাম বর্ষণে থানচি ও রুমা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

খাগড়াছড়ির অনেক নিচু এলাকায় পানি জমে আছে। বন্যার পানিতে এখনও ডুবে আছে মেরুং বাজার। এখনও পানির নিচে আছে দেড় শতাধিক দোকান। লংগদুর সঙ্গে খাগড়াছড়ির যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বলতে গেলে, লংগদু সারাদেশ থেকেই বিচ্ছিন্ন। খাগড়াছড়িতে তিন হাজার ৭০০ হেক্টর আমনের মধ্যে ৪৫৩ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে।

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে পাহাড়ি ঢলে ভেসে আসা ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মাচালং দিপুপাড়া এলাকায় নদীর পাড় থেকে কাওলা ত্রিপুরা (৩৫), বঙ্গলতলী ইউনিয়নের করেঙ্গাতলী এলাকা থেকে রাহুল বড়ুয়া (১০), উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে উগলছড়ি বিল থেকে মো. জুয়েল (৭), জুনি চাকমা (৭) ও সাজেকে মেনুকা চাকমার (৭) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ‘এখনো বাঘাইছড়ির নিম্নাঞ্চল পানির নিচে রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন প্রায় ৯০০ জন। বাঘাইছড়িতে প্রায় ২ হাজার মানুষ পানি বন্দী রয়েছেন।’

রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জেলার ১০ উপজেলায় আউশ, আমন, সবজি, আদা ও হলুদের ৩ হাজার ১৩৫ দশমিক ৫৫০ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

গত ১০ দিন ধরে টানা ভারী বর্ষণের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসময় বেসরকারি হিসেবে গৃহহীন হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। কিছু মানুষ আশ্রয়স্থল গেলেও অধিকাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং প্রাণ হারিয়েছে অনেক জন্য। কয়েক বছরের মধ্যে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে হয়নি। পাহাড় ধ্বসের ঘটনাকে হার মানিয়েছে এই বন্যা পরিস্থিতি। 

এই বন্যা পরিস্থিতি পাহাড়ি- বাঙ্গালী উভয় সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। প্রশাসন সহ যারা এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে এগিয়ে এসেছেন, তারা সবাই চিহ্নিত। দুঃখজনক হলেও বলতে হয়, যারা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকার তথা জীবন সংগ্রামে ভূমিকা রাখবে বলে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে গণচাঁদা, এককালীন চাঁদা ও বিভিন্নভাবে চাঁদা নিয়ে আসছে তাদের কাউকে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ সময় এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। সাধারণ মানুষের কাতারে তাদের দেখা যায়নি। এটা যেমন হতাশার তেমন লজ্জার ঘটনা। অথচ তারাই জাতির অধিকারের দোহাই দিয়ে বছরে হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে বিলাসবহুল জীবনযাপনের পাশাপাশি নিজেদের সন্তানাদি নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করাচ্ছে। কিন্তু জাতির এই দুঃসময়ে তাদেরকে মানুষের কাতারে দেখা যায়নি। এটা নিয়ে সাধারণ পার্বত্যবাসী যেমন বিস্ময়প্রকাশ করেছে সেসাথে সচেতন মহলও অবাক হয়েছেন। 

আমরা দেখেছি, পার্বত্য চট্টগ্রামে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে বন্যার পানি যখন বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কিংবা (পাহাড় ধ্বসে) সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে তখন শুধুমাত্র সেনাবাহিনীকে এগিয়ে আসতে দেখা গেছে। সাধারণ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে সেনাবাহিনী কঠোর পরিশ্রম করেছে এবং মানুষের মধ্যেই বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করেছে। অথচ এই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নানান মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য সাধারণ পাহাড়িদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে ঘৃণা ও বিদ্বেষ তৈরি করে সন্ত্রাসীরা। যার ফলে সেনাবাহিনী সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। 

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িরা বুঝতে পারছে তথাকথিত অধিকারের দোহাই দিয়ে আঞ্চলিকদলগুলো হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে আর সাধারণ মানুষের রক্ত নিয়ে হোলিখেলা খেলে। এজন্য সাধারণ পাহাড়িরা আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দলগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল খবর সবার আগে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন*

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here