খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার সদর ইউনিয়নের আলুটিলায় প্রত্যন্ত ৪টি গ্রামের ১৬০টি পরিবারের দীর্ঘ ৩৭ বছর পর সুপেয় পানির সংকট দূর হলো। শনিবার (৩০ এপ্রিল) সকালে খাগড়াছড়ি রিজিয়নের স্থাপিত প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে সুপেয় পানির সংকট দূরীভূত হয়।
খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এ প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন করেন। এসময় তিনি বলেন, পাহাড়ে কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠী চাঁদাবাজি করে বিদেশে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে। তারা এসব প্রত্যন্ত এলাকার সাধারণ ও হতদরিদ্র মানুষের জীবন জীবিকার কথা ভাবেনা।
এ সময় তিনি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা পাহাড়ি বা বাঙ্গালি যেই হোক না কেন তাদের পরিচয় শুধু একটাই তারা সন্ত্রাস।
তিনি আরো বলেন, সেনাবাহিনী পার্বত্য অঞ্চল তথা সমগ্র দেশের মানুষের শান্তি সম্প্রীতি ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে খাগড়াছড়ি রিজিয়ন তথা সমগ্র সেনাবাহিনী স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিনিয়ত জনকল্যাণমূলক কাজ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় অত্র এলাকার জনসাধারণের সুবিধার্থে খাগড়াছড়ি রিজিয়নের এই প্রচেষ্টা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য এলাকার এবং দেশের সকল মানুষের পাশে সবসময় ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
স্থানীয়রা সেনাবাহিনীর এ ধরনের কার্যক্রমে খুবই খুশি হন এবং বলেন আমাদের এই এলাকার দীর্ঘদিনের পানির সমস্যা থেকে আজ আমরা মুক্তি পেলাম। এখন থেকে আমরা সকলে স্বাস্থ্যসম্মত পানি ব্যবহার করতে পারবো। পানির জন্য আমাদের যে কষ্ট করতে হতো, আজ থেকে আমরা সে কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়েছি। এই মহতী উদ্যোগের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, খাগড়াছড়ি জোন কমান্ডারকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
জানা যায়, খাগড়াছড়ি জেলাধীন পূর্ণবাসন ১ ও ২ প্রকল্প দুটি জেলা শহর থেকে ৮ কি. মি. দূরে আলুটিলা এলাকায় অবস্থিত। প্রকল্প দুটি ১৯৮৫ সালে নির্মাণ করা হয়। পূর্ণবাসন ১ ও ২ এলাকায় যথাক্রমে ১২০টি পরিবার ও ৪০টি পরিবারে সর্বমোট ৩৫৭ জন বসবাস করে। অত্র এলাকায় সুপেয় পানির ঘাটতি থাকার কারণে পূর্নবাসন প্রকল্প ১ ও ২ এর জনসাধারণ বিগত ৩৭ বছর যাবত নিদারুণ কষ্ট ভোগ করে আসছে।
এমতাবস্থায়, বিষয়টি গত মার্চ মাসের ২৫ তারিখে খাগড়াছড়ি রিজিয়নের দৃষ্টি গোচরীভূত হলে রিজিয়ন কমান্ডার, খাগড়াছড়ি রিজিয়নের আদেশক্রমে এবং খাগড়াছড়ি সদর জোনের তত্ত্বাবধানে পূর্ণবাসন ১ ও ২ এলাকায় জনগণের স্বার্থে একটি ১০ হাজার লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন পানির ট্যাংক স্থাপন এবং পাম্পের মাধ্যমে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫০০ মিটার উচুঁতে পাইপের আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে সুপেয় পানির সুব্যবস্থা করা হয়েছে। এই ১০ হাজার লিটার ট্যাংক হতে পূর্ণবাসন এলাকার (৪০ পরিবার, ৩৩ পরিবার, দৌকান পাড়া, মন্দির পাড়া) ৪টি গ্রামে সুপেয় পানির সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে।
প্রকল্পটি গত ১৮ এপ্রিল পাম্প স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়ে গত ২৯ এপ্রিলে মাত্র ১২ দিনের মধ্যে পাম্প স্থাপনের কার্যক্রম সম্পূর্ণ সমাপ্ত হয়। খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম’র বদান্যতায় সর্বমোট ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি সম্পন্ন হয়। এখন থেকে এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের পানির সমস্যা দূর হবে।
উক্ত প্রকল্পটি উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি জোন কমান্ডার লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, পিএসসি, খাগড়াছড়ি রিজিয়নের স্টাপ অফিসার জিটুআই মেজর মো. জাহিদ হাসান, সদর জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর মো. রিয়াজুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মো. শিহাব উদ্দিন, মাটিরাংগা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হেমেন্দ্র ত্রিপুরা প্রমুখ।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল খবর সবার আগে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন*