সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের বাধা, নেপথ্যে আঞ্চলিক দলের নেতারা

0
34

পার্বত্যাঞ্চলে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের বিরোধিতায় নেমেছে আলোচিত আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো। সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রতিষ্ঠা হলেই তাদের কর্তৃত্বের অবসান ঘটবে বলে তারা অপার সম্ভাবনাময় এই অঞ্চলের উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন চায় না।

সবুজ অভয়ারণ্যের আড়ালে আঞ্চলিক দুই সংগঠন ত্রাস চালিয়ে মাসে ৫০০ কোটি টাকার চাঁদা আদায় করে পার্বত্যাঞ্চলে। আর এই টাকার ভাগ কতিপয় বুদ্ধিজীবী ও এক শ্রেণির রাজনীতিবিদরা পান। এ কারণে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের পক্ষে বিভিন্ন সময় তারা সাফাই গেয়ে থাকেন এবং বিবৃতি প্রদান করেন। 

পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য পার্বত্যাঞ্চল আকর্ষণীয় স্থান। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত ব্যবস্থা ও হোটেল মোটেলসহ নানা অবকাঠামোর অভাবে অনেক পর্যটক এখানে যেতে পারেন না। এ অবস্থার অবসানে পার্বত্যাঞ্চলে উন্নত অবকাঠামোর দাবি অনেকের।

বিশ্বব্যাপী পর্যটকের ৭৩ শতাংশ এখন ভ্রমণ করেন এশিয়ার দেশগুলোতে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশও সারা বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল কয়েকটি পর্যটন মার্কেটের অন্যতম। এছাড়া বাংলাদেশে প্রতি বছর ৯৫ থেকে ৯৮ লাখ পর্যটক দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণ করে থাকেন। বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা পার্বত্য অঞ্চল, যা পার্বত্য চট্টগ্রাম নামে পরিচিত। পার্বত্য চট্টগ্রাম মূলত তিনটি জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি নিয়ে গঠিত। পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটনের মূল উপকরণ হলো পাহাড়ঘেরা সবুজ প্রকৃতি, যা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপে পর্যটকদের কাছে ধরা দেয়। এটি যেন ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলানোর খেলা। এখানে শীতে যেমন এক রূপ ধরা দেয় ভ্রমণপিপাসুদের কাছে, বর্ষায় অন্য রূপে হাজির হয় কাছে। শীতে পাহাড় কুয়াশা ও মেঘের চাদরে ঢাকা থাকে, তার সাথে সোনালি রোদের মিষ্টি আভা। আবার বর্ষায় চার দিকে সবুজের সমারোহ। এ সময় প্রকৃতি ফিরে পায় নতুন যৌবন। বর্ষায় মূলত অ্যাডভেঞ্চার টুরিস্টদের পদচারণা সবচেয়ে বেশি থাকে এ পার্বত্যাঞ্চলে। তখন এখানে ঝরনা, হ্রদ কিংবা নদীপথগুলো নতুন রূপে সেজে ওঠে যা দেখার জন্য অসংখ্য পর্যটক এখানে ভিড় করেন। এর সাথে আছে পাহাড়ের মানুষের ভিন্নধর্মী জীবনাচরণ যা আমাদের চেয়ে আলাদা। পর্যটনের জন্য পার্বত্যাঞ্চল একটি অকল্পনীয় পরিবেশ। এমন পরিবেশ বিশ্বের কোথাও নেই। যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলে এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটিয়ে পর্যটন এলাকা ঘোষণা করা হলে এ খাত থেকে বিপুল অর্থ আসবে। বিশ্বের অন্যতম আর্থিক শক্তিশালী দেশ হবে বাংলাদেশ।

করোনার মধ্যেও শত শত পর্যটক পাহাড়ে গেছে। রাঙ্গামাটির শুভলং এলাকায় রিসোর্টে একজন পর্যটকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি ময়মনসিংহের ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া। স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেখানে বেড়াতে গেছেন। তিনি বলেন, অনেক দেশে তিনি ভ্রমণ করেছেন। কিন্তু পার্বত্যাঞ্চলের মতো এমন পরিবেশ কোথাও পাননি। ৭ থেকে ৮ দিন তিনি সেখানে থাকবেন বলে জানান। পরে তিনি বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে বেড়াতে যাবেন। 

ঢাকার ধানমন্ডিতে বসবাসরত চাকরিজীবী নুরুল আমিনও সপরিবারে এসেছেন। তিনি বলেন, অফিসের কাজে বিভিন্ন সময় বিদেশে গেছি। কিন্তু পার্বত্যাঞ্চলে আসলে মনটা ভরে যায়। পুরো পার্বত্যাঞ্চল নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে পর্যটন কেন্দ্র করে দেওয়া হলে দেশ আর্থিকভাবে শক্তিশালী হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সাজেকে দেখা হয় চট্টগ্রামে বসবাসরত ব্যবসায়ী ফারুকের সাথে। স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেড়াতে এসেছেন। তিনি বলেন, পার্বত্যাঞ্চলকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সার্বিকভাবে প্রস্তুত করার কাজটি একমাত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ছাড়া আর কেউ পারবেন না। এখানে নিরাপত্তার অভাব না থাকলে মানুষের ভিড় লেগেই থাকতো। তিনিও নিরাপত্তার অভাব অনুভব করছেন জানিয়ে বলেন, পর্যটন শিল্প বিকাশে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কিছু সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন। পর্যটকদের আকর্ষণ নিরুৎসাহিত করতে তারা বিভিন্ন সময় রাস্তায় পর্যটকদের ওপর হামলা ও নির্যাতন করেন।

এদিকে পর্যটন শিল্প বিকাশের অংশ হিসেবে উন্নত রাস্তা নির্মাণ ও হোটেল করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এটাও বিরোধিতা করছে জেএসএস মূল ও ইউপিডিএফ। আর তাদের সুরে কথা বলছেন কতিপয় বুদ্ধিজীবী ও এক শ্রেণির রাজনীতিবিদ, যারা নিয়মিত জেএসএস মূল ও ইউপিডিএফের কাছ থেকে চাঁদার টাকার ভাগ পেয়ে থাকেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পাহাড়ি বাঙালির সাথে কথা বলে জানা গেছে, পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি বিনষ্টের মূলে জেএসএস মূল ও ইউপিডিএফ। তিনি আরও বলেন, আপনি যদি আমার নাম প্রকাশ করেন তাহলে পুরো পরিবারকে মেরে ফেলবে তারা। 

পাহাড়ি বাঙালিরা বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত ও শান্তি বজায় রাখতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী না থাকলে আমরা টিকে থাকতে পারতাম না। পাহাড়ি বাঙালিরা বলেন, আমরা শান্তি চাই, এক সাথে বাঁচতে চাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here