অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের তান্ডবে বিপন্ন পার্বত্য জনপদ

0
37

 

প্রতিনিয়ত
আঞ্চলিক
সংগঠনগুলোর চাঁদাবাজি হয়রানির শিকার হওয়ায় খাগড়াছড়িতে জুম চাষিরা চাষাবাদ বন্ধ করে দিয়েছে। তারা
এমন অত্যাচারিত হয়ে আর চাষাবাদ করতে চান না। একই অভিযোগ আনছে
পরিবহন
শ্রমিক ও মালিক সমিতির লোকজন। তাদের দাবি, পার্বত্য অঞ্চলে কয়েক যুগ ধরে সশস্ত্র
সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি চলছে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগের তথ্য প্রমাণ
থাকা সত্ত্বেও কিভাবে তারা দিব্যি চাঁদাবাজি চালাচ্ছে? সাংবাদিকদের কাছে এমন প্রশ্ন
তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পরিবহন শ্রমিকেরা! এমনকি সরকার ও প্রশাসন যদি সন্ত্রাসীদের
বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকরি ব্যবস্থা না নেয়। তাহলে তারা পরিবহন সেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা
দিতে বাধ্য হবে বলে সাংবাদিকদের জানান।

পাহাড়ি
এসব সংগঠন গুলোর চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে কিছুদিন পূর্বেও খাগড়াছড়ির
দীঘিনালা, মহালছড়ি রাঙ্গামাটির লংগদু, বাঘাইছড়িতে পরিবহন
চলাচল
বন্ধ রাখা হয়। ফলে রাঙ্গামাটির বেশ কয়েকটি খাদ্যগুদামে মজুদ খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। মাঝে মাঝে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশি নিরাপত্তায়
বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্য সরবরাহকারী
পরিবহন চলাচল করেছিল।

সূত্র জানায়, পাহাড়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে
জেএসএস
ইউপিডিএফ সহ বিভিন্ন সংগঠন চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়েছে। ঘটছে খুনোখুনির ঘটনাও।

অপরদিকে
এ বিষয়ে খোজ নিতে গিয়ে জানা যায়, পাহাড়ে
দুষ্কৃতকারীদের চাঁদাবাজি হয়রানিতে
অতিষ্ঠ
চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের ঠিকাদাররাও। পাহাড়ে এমন কোনো খাত নেই যেখানে কেউ সন্ত্রাসীদের চাঁদা না দিয়ে পার
পায়! এমনকি সন্ত্রাসী
সংগঠনগুলোকে চাঁদা না দিলে প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ খাদ্য পরিবহণ ঠিকাদার সমিতি তিন পার্বত্য জেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক পরিবহণ ঠিকাদার (খাদ্য) ফেডারেশনের নেতারা এমন অভিযোগ করেছেন। পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি হয়রানির কথা উল্লেখ করে সংগঠন দুটি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক বরাবরে চিঠি দিয়েছে। চাঁদাবাজি হুমকিধমকির কারণে পাহাড়ে খাদ্যশস্য পরিবহন এক প্রকার বন্ধ রয়েছে। কারণে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি বান্দরবান জেলায় সরকারি খাদ্যগুদামে খাদ্যশস্যের মজুদ কমে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার সমিতির নেতারা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে পাহাড়ি দুষ্কৃতকারীরা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন
ঠিকাদার
বান্দরবান জেলা অভ্যন্তরীণ সড়ক পরিবহন ঠিকাদার (খাদ্য) ফেডারেশনের ঠিকাদারদের কাছ থেকে অস্বাভাবিক মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে আসছে। স্বেচ্ছায় চাঁদা না দেওয়ায় কয়েক সপ্তাহ ধরে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি, পানছড়ি রাঙামাটির লংগদু, বাঘাইছড়ি খাদ্যগুদামে খাদ্যশস্যবাহী ট্রাক আটকে রেখে দুষ্কুতকারীরা ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করছে। চাঁদা না পেলে খাদ্য পরিবহনে ভিইনভয়েস ছিনিয়ে নিয়ে চালককে মারধর এবং পণ্যবাহী ট্রাক পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এর আগে বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করা হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছিল না। নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে খাদ্য পরিবহন
সমিতি
সাধারণ জনগণের জন্য খাদ্যশস্য পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু হয়রানি চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে শেষ পর্যন্ত পাহাড়ে খাদ্য পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার সমিতির নেতারা খাদ্য পরিবহন বন্ধ করে দিলে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে বৈঠক হয়। বৈঠকে পাহাড়ি সন্ত্রাসী বা দুষ্কৃতকারীদের ব্যাপারে আলোচনা হয়। আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়, খাগড়াছড়ির মহালছড়ি, পানছড়ি রাঙামাটির লংগদু, বাঘাইছড়ি খাদ্যগুদামে খাদ্যশস্যবাহী ট্রাক পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে পরিবহন করা হবে। খাদ্যশস্য গুদামে বুঝিয়ে দেওয়ার পর খালি ট্রাকও একইভাবে পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হবে।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কাছে দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয় উপজেলায় তিনটি খাদ্যগুদাম রয়েছে। তিনটি খাদ্যগুদামে খাদ্যশস্য মজুদ করার লক্ষ্যে আগত খাদ্যশস্যবাহী ট্রাক আটকে খাগড়াছড়িদীঘিনালা সড়কে কতিপয় দুষ্কৃতকারী চাঁদা দাবি করে। কারণে বাংলাদেশ খাদ্য পরিবহন
ঠিকাদার
সমিতি চিঠি দেওয়ার পর সরকারি খাদ্যশস্য পরিবহন বন্ধ করে দেয়। ফলে গুদামে খাদ্যশস্যের মজুদ স্বল্পতার কারণে বিভিন্ন প্রকল্পের খাদ্যশস্য যথাসময়ে ডেলিভারি দেওয়া যাচ্ছে না। এতে শঙ্কার তৈরি হচ্ছে।

বাংলাদেশ খাদ্য পরিবহন
ঠিকাদার
সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশীদ সাংবাদিকদের জানান, পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। পুলিশি প্রহরায় খাদ্যশস্যের গাড়ি আনানেওয়া করার ব্যাপারে জেলা প্রশাসন থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। এরপরও ঠিকাদাররা অনেকটা আতঙ্কে আছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here