সন্তু লারমার মূল লক্ষ্য ছিল চুক্তির মাধ্যমে পাবর্ত্য চট্টগ্রামকে কৌশলে নিয়ন্ত্রণে নেয়া। আলাদা জুম্মল্যান্ড বানানোর গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তৈরি করছে আলাদা মানচিত্র, নিজস্ব মুদ্রা ও গেরিলা বাহিনী যা দেশদ্রোহীতা ও শান্তিচুক্তির পরিপন্থি। সরকারের পক্ষ হতে চুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়ন করলেও সন্তু লারমা চুক্তির মৌলিক ধারা তথা অবৈধ অস্ত্র পরিহার করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার শর্ত কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা।
পার্বত্যাঞ্চলে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ মূলক কাজে সন্ত্রাসীদের কর্তৃক বাঁধা প্রদান, চাঁদা আদায়, অপহরণ, খুন-গুম ও ধর্ষণ করে সমগ্র এলাকা জুড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। পাহাড়ে চাঁদাবাজির শিকার যে শুধু বাংগালী তা নয়, বাংগালীদের চেয়ে সাধারণ উপজাতিরা স্বজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক বেশি চাঁদাবাজির শিকার হয়। নির্দিষ্ট পরিমাণের আয় না থাকলে তারা সরকারকে ট্যাক্স দেয় না। আর নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উপরও সরকার কোন ধরনের ভ্যাট বা শুল্ক আরোপ করেনি। সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধা ভোগ এবং সরকারের ট্যাক্স থেকে মুক্তি পেলেও কথিত আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর ট্যাক্সের আদলে চাঁদা থেকে রেহাই পাচ্ছে না পাহাড়ের জনগণ। উপজাতি-বাঙালি নির্বিশেষে এসব উপজাতি সন্ত্রাসীদেরকে চাঁদা দিতে বাধ্য। এমনকি মুরগির ডিম ও কলা বিক্রি করলেও সেখান থেকে চাঁদা আদায় করছে এসব উপজাতি সন্ত্রাসীরা। তারা প্রকাশ্যে চিঠি দিয়ে চাকুরিজীবীদের কাছ থেকেও চাঁদা আদায় করছে। কার কাছ থেকে কত টাকা চাঁদা নেয়া হবে সে রেটটাও নির্দিষ্ট করা আছে। পার্বত্য তিন জেলার বাসিন্দাদের কাছে চাঁদার এ রেট মুখস্থ।
সম্প্রতি সমগ্র পার্বত্যাঞ্চল জুড়ে আঞ্চলিক সংগঠন জেএসএস ও ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের অপহরণ ও চাঁদাবাজির চিত্র পরিলক্ষিত হয়। এ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে তিন জেলার মানুষ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া তো দূরের কথা, উচ্চস্বরে কথা পর্যন্ত কেউ বলতে পারে না। এমনকি স্থানীয় ক্ষমতাসীন সরকার দলীয় নেতারাও সন্ত্রাসী এসব সংগঠনের কাছে অসহায়। নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ চাঁদাবাজদের আটক করলেও আইনের ফাঁক ফোকরে বেরিয়ে যায় তারা। নিত্য-নতুন উপায়ে অত্যন্ত কঠোরতার সঙ্গে চাঁদা আদায় করা হয়। এদিকে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে কিংবা না দিলে তাদের প্রাণনাশের পাশাপাশি নানাভাবে হয়রানি করা হয়। এ কারণে পার্বত্য এলাকার মানুষের মাঝে এখন বিরাজ করছে সশস্ত্র সংগঠনগুলোর চাঁদাবাজি ও নিরাপত্তার আতঙ্ক।
বেশির ভাগ ভুক্তভোগী চাঁদার বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে স্বীকার করে না। দুর্গম এলাকা হওয়ায় আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানো সম্ভব হয় না বলে তারা চুপ থাকে। ধার্য্যকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই শুরু হয় অপহরণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, ধর্ষণ এবং পুড়িয়ে দেয়া হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি-ঘর ও যানবাহন। প্রতিদিনই পার্বত্যাঞ্চল থেকে উপজাতি সশস্ত্র গ্রুপগুলো এক থেকে দেড় কোটি টাকার চাঁদা আদায় করছে যা বছর শেষে পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। চাঁদা আদায়ে নিয়োজিত রয়েছে জেএসএস ও ইউপিডিএফের ১০ হাজার সশস্ত্র প্রশিক্ষিত কর্মী। এই দিয়েই দলের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সন্ত্রাসী বাহিনীর বেতন-ভাতা, রেশন, ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি দেয়া হয়। এ ছাড়া এ অর্থ দিয়ে দেশ-বিদেশে বাঙালি ও নিরাপত্তা বাহিনীর বিরোদ্ধে উস্কানিমূলক প্রচারণা ও তাদের অস্ত্র ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করার কাজ করে থাকে।
সরকারের উচিত হবে- এসব রাজাকার, দেশ ও জাতির শত্রু, দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতক উপজাতি সন্ত্রাসী, মিশনারী এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে তিন পার্বত্যাঞ্চলকে রক্ষার নিমিত্তে অনতিবিলম্বে সন্ত লারমাকে বিচারের সম্মুখীন করে এর অবসান করা। এছারাও পার্বত্য অঞ্চলে র্যামবসহ নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প বৃদ্ধি করে এ অঞ্চলের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা এবং তাদের যথাযথ বিচারের কাঠগড়ায় এনে দেশদ্রোহিতার বিচার করা।