পাহাড়ি জনপদ বান্দরবান। এখানকার ছোট–বড় পাহাড়ে জনবসতির ইতিহাস প্রায় তিন যুগেরও বেশি। শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ পাহাড় চূড়া, পাদদেশ ও কোলঘেঁষে বসবাস করে আসছে। বর্ষা মৌসুম এলেই এ অঞ্চল পরিণত হয় আতঙ্কিত জনপদে। তবে পরপর কয়েক বছরের পাহাড় ধস ট্রাজেডির কারণে এ পার্বত্য জনপদে বসবাসকারি অধিবাসীরা এখন পাহাড় দেখলে রীতিমত আঁতকে উঠে।
বান্দরবান পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড বনরুপা’র রূপনগর এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে
পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছেন প্রায় শতাধিক পরিবার। অবৈধ ভাবে ও অপরিকল্পিত ভাবে পাহাড়
কাটার ফলে পাহাড় ধসের আশঙ্কাও দিন দিন বাড়ছে। কিন্তুু কিছুতেই অবৈধ পাহাড় কাটা বন্ধ
করা যাচ্ছে না। রপনগর এলাকায় কিছু সিন্ডেকেট এর মাধ্যমে পাহাড়ে প্লট বিক্রয় বেড়ে যাওয়ার
ফলে দিন দিন বাড়ছে অবৈধ ভাবে পাহাড় কাটা। পাহাড় কাটার ফলে একদিকে যেমন ধংস হচ্ছে পরিবেশ
অন্যদিকে বাড়ছে পাহাড় ধসের । ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রবল
বর্ষণ ও ভূমি ধসে বিভিন্ন বয়সী নারী-শিশুসহ ৮৯জনেরও বেশি মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের মতে, পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা প্রায় শ্রমিক শ্রেনীর
মানুষ এবং যারা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে তাদের মধ্যে হতদরিদ্র পরিবারের সংখ্যাই বেশি।
জীবিকার তাগিদে পাহাড়ের ঢালুতে পাহাড় কেটে তৈরি করা আবাসস্থলগুলোতে কম ভাড়ায় বসবাস
করা যায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিবছর বর্ষাকালে পাহাড় ধস প্রতিরোধ এবং জনগণকে নিরাপদ
দায়িত্বে সরে যেতে কার্যক্রম দেখা গেলেও বর্ষা শেষে আবার সেই আগের রূপ।পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষাই পাহাড় ধস রোধের অন্যতম মাধ্যম। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় পাহাড়, গাছ কাটা ও পাথর উত্তোলন রোধে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ সর্বমহলের।
বান্দরবান মৃত্তিকা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)
মাহবুবুল ইসলাম এর মতে, পাহাড় ধস তাৎক্ষণিক ঘটনা মনে হলেও এটি দীর্ঘ মেয়াদী প্রক্রিয়ার
ফসল।ভূমি ক্ষয়ের মাধ্যমে পাহাড়ে ফাটল তৈরি হয় এবং ধ্বস নামে। পাহাড় ধ্বসের অন্যতম কারণ
হচ্ছে-নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা এবং উপযুক্ত পদ্ধতি অবলম্বন
না করে পাহাড়ে চাষাবাদ করায়। তবে পাহাড় ধ্বস বন্ধে বৃক্ষ নিধণ এবং পাহাড় কাটা বন্ধ
করতে হবে। তা না হলে প্রতিনিয়ত প্রাণহানির ঘটনা আরও বাড়বে।