বাণী চিরন্তন : প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদ- বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের আসল স্বরূপ




লেখক হুমায়ূন আহমেদ এর সাক্ষাতকার নেয়ার সময় অভিনেতা ও সাংবাদিক মাহফুজ আহমেদ একটি প্রশ্ন করেছিল….

প্রশ্নটি ছিল : ‘’এ দেশের বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?’’
.
হুমায়ূন আহমেদের সাবলীল উত্তর :
.
“আমাদের বুদ্ধিজীবী সমাজে যাঁরা আছেন, তাদের কার্যক্রম খুব একটা পরিষ্কার না। এরা কেন জানি ইসলাম ধর্মকে খুব ছোট করে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান অন্য যেকোনো ধর্মের প্রায় সব উৎসবে আমাদের বুদ্ধিজীবীরা উপস্থিত থাকেন, বক্তৃতা করেন, বাণী দেন- কিন্তু ইসলামি কোনো জলসায় কেউ উপস্থিত থেকেছেন বলে শোনা যায় না। তাদের মতে, ইসলামি জলসায় কেউ উপস্থিত থাকা মানে তার বুদ্ধিবৃত্তি নিম্নমানের। সে একজন প্রতিক্রিয়াশীল, সাম্প্রদায়িক লোক। আমাদের বুদ্ধিজীবীদের কাছে হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিষ্টানদের কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার অর্থ মুক্তবুদ্ধির চর্চা করা, প্রগতির চর্চা করা, সংস্কারমুক্ত হওয়া ইত্যাদি।
.
নোবেলজয়ী প্রফেসর সালাম ঢাকায় এসে যখন বক্তৃতার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বললেন, তখন আমাদের বুদ্ধিজীবীরা হকচকিয়ে গেলেন। কারণ তাদের কাছে প্রগতিশীল হওয়া, বুদ্ধিজীবী হওয়া, মুক্তবুদ্ধির চর্চা করা মানেই ইসলামবিরোধী হতে হবে। তাদের কাছে রামকৃষ্ণের বাণী, যিশুর বাণী সবই গ্রহণীয়। এসব তারা উদাহরণ হিসেবেও ব্যবহার করেন; কিন্তু হজরত মোহাম্মদ (সা:)’র বাণী কখনো তাদের মুখ থেকে শোনা যায় না। তাদের কাছে তিনি বাণী গ্রহণযোগ্য নন।
.
আমার মতে, পৃথিবীর তাবৎ ঔপন্যাসিক যাঁর কোটের পকেট থেকে বেরিয়ে এসেছেন, তার নাম দস্তয়ভস্কি। আরেকজন আছেন মহামতি টলস্টয়। এক রেলস্টেশনে যখন টলস্টয় মারা গেলেন, তখন তাঁর ওভারকোটের পকেটে একটি বই পাওয়া গেছে। বইটি ছিল টলস্টয়ের খুব প্রিয়। সব সময় সঙ্গে রাখতেন। সময় পেলেই পড়তেন। বইটি হজরত মোহাম্মদ সা:-এর বিভিন্ন সময়ে বলা গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো নিয়ে গ্রন্থিত।
.
আমি বিনয়ের সঙ্গে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের কাছে জানতে চাইছি, আপনাদের ক’জন বইটি পড়েছেন? টলস্টয় যে বইটি পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন, সেই বই আমাদের প্রত্যেকের একবার কি পড়া উচিত নয়? আমার মতে, প্রতিটি শিক্ষিত ছেলেমেয়ের বইটি পড়া উচিত।”

Ref: ঘরে বাইরে হুমায়ুন আহমেদের হাজার প্রশ্ন —- মাহফুজ আহমেদ

টলস্টয়ের পকেটে পাওয়া বই – Saying of Prophet