রাঙামাটি পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ জেলা শাখার উদ্যোগে কাঠালতলী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে শুক্রবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে রাঙামাটি শহরে অবস্থানরত বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে মতবিনিময় ও ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
রাঙামাটি জেলা শাখার ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ রাঙামাটি জেলার সভাপতি মুহাম্মদ শাব্বির আহম্মেদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ রাঙামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সোলায়মান, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ–সভাপতি মোঃ হাবিব আজম, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের রাঙামাটি জেলা কমিটির সিনিয়র সহ–সভাপতি মোঃ নাদিরুজ্জামান, সহ–সভাপতি কাজী মোঃ জালোয়া, সিনিয়র যুগ্ন সম্পাদক জাবেদ মোহাম্মদ নূর, প্রচার সম্পাদক মোঃ হুমায়ন কবির, অর্থ সম্পাদক মোঃ ইব্রাহিম, সহ–অর্থ সম্পাদক মোঃ আতাউর, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ নাজিম আল হাসান, প্রচার সম্পাদক মোঃ তাজুল ইসলাম তাজ সহ প্রমুখ।
প্রথান
অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের রাঙামাটি জেলা সভাপতি মুহাম্মদ শাব্বির আহম্মেদ বলেন, পার্বত্য অঞ্চলকে অনগ্রসর অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, চাকরি, উচ্চশিক্ষা বৃত্তি, ব্যবসা–বাণিজ্যে নানা রকম কোটা ও সুযোগ–সুবিধা চালু করেছে সরকার। তবে একই এলাকায় বসবাস করে জনগোষ্ঠীর অর্ধেক হয়েও তা পাচ্ছেন না বাঙালিরা। শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হচ্ছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগিরা। অবিলম্বে সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করে জনসংখ্যানুপাতে সকল সুযোগ–সুবিধা বণ্টন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে একজন বাঙালি প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়ার দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ রাঙামাটি
জেলার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, মেডিক্যাল, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ
সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য সকল উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে উপজাতীয় ছাত্র-ছাত্রীদের
ভর্তির জন্য কোটা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে ১৯৮৪ সাল থেকে। শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের
পর কোটার সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতি বছর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩২৫ জন
উপজাতি ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে কোটাতেই। নতুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এর সংখ্যা আরো বাড়ানো হয়েছে। অন্য দিকে একই অঞ্চলের পিছিয়ে
পড়া জনগোষ্ঠী বাঙালিদের জন্য তেমন কোনো সুযোগ এখনো তৈরি করা হয়নি। পিছিয়ে পড়া অঞ্চল
হিসেবে চিহ্নিত পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী দু’টি জনগোষ্ঠীর জন্য দুই রকম নীতি গ্রহণ
করা হয়েছে। পার্বত্য বাঙালি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৩টি
আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। তাও সেটি পার্বত্য বাঙালি ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের ফলে।
শিক্ষার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন পাহাড়ের বাঙালিরা। উপজাতি
জনগোষ্ঠী করের আওতামুক্ত হলেও বাঙালিদের কর দিতে হচ্ছে। এছাড়াও পাহাড়ি সংগঠনগুলোর আদায়
করা চাঁদার ক্ষেত্রে বাঙালিদের কাছ থেকে অধিক হারে আদায় করা হয়। পার্বত্য এলাকায় উন্নয়নমূলক
প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দ দু’লাখ টাকার মধ্যে হলে ঠিকাদারী সম্পূণরূপে উপজাতিদের জন্য
সংরক্ষিত। দু’লাখ টাকার ঊর্ধ্বে বরাদ্দকৃত প্রকল্পের ১০ শতাংশ উপজাতিদের আর বাকি ৯০
শতাংশ উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হলেও তার বেশির ভাগ পায় উপজাতিরাই। আয়কর দিতে
হয় না বলে তারা বাঙালিদের চাইতে কম দরে কাজ করার সুযোগ পায়। উপজাতীয়রা ব্যাংক ঋণ নিলে
তাদের সুদ দিতে হয় শতকরা মাত্র পাঁচ টাকা। আর বাঙালিদের সুদ দিতে হয় ১৬ শতাংশ।
গত ২০১৬ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উচ্চ শিক্ষাবৃত্তি একটি তালিকা তুলে ধরে হাবিব আজম বলেন, উন্নয়ন বোর্ডের ওই তালিকায় সর্বমোট ৪৭৫ জনকে বৃত্তি প্রদান করা হয়। এর মধ্যে উপজাতির সংখ্যা ৩৬৪ জন আর মাত্র ১১১ জন বাঙালি (মুসলিম, হিন্দু ও বডুয়া) শিক্ষার্থী।এর মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলায় দেয়া ১৫৮ জন ছাত্র–ছাত্রীর মধ্যে উপজাতি শিক্ষার্থী ১২১ জন,৩৭ জন বাঙালি।রাঙামাটি জেলায় ১৫৯ জন।